কলিং বেল বেজে উঠলে আম্মু তড়িঘড়ি করে আব্বুকে বললো,,,, জলদি দরজাটা খুলে দাও ওরা বোধহয় এসে গেছে,,,, আব্বু দরজার দিকে গেলে আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,,,,, সিয়া তুই রেডি হয়ে গেছিস,,, দেখি সব ঠিকটাক আসে কিনা,,, তারপর আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে নিলো,,,, বাহ তোকে তো বেশ লাগছে,... মাথায় কাপড়া আরেকটু ফেলে দে,,, ঘোমটা টাইপের দিয়েছিস কেনো বলে কাপড়টা একটু সরিয়ে দিলো,,,
আমিও নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম,,, হ্যা সুন্দর লাগছে,,, আজ ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসছে,,.. আব্বুর দূর সম্পর্কের রিলেটিভ হয়,,, ছেলে কানাডা থেকে এসেছে,,, এবার ভালোই ভালোই আমাকে পছন্দ করলে হলো,,,
একটু পর আম্মু এলো আমাকে নিতে,........ ওদের সামনে গিয়ে লম্বা সালাম দিলাম,,,,,,, ছেলের মা বাবা আর দুইটা ফ্রেন্ড এসেছে,,,,,, মাশাআল্লাহ ছেলে তো দেখতে হিরোর মতো,,,, এত্ত এত্ত কিউট আমার তো দেখেই মনে ধরেছে,,,,, আর ছেলেও আমাকে বোধহয় পছন্দ করেছে,,, কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আর ফ্রেন্ড দুটোর সাথে কথা বলে বলে মিটিমিটি হাসছে,,,,
হ্যা ওরা আমাকে পছন্দ করেছে,,, মোটামুটি সব ঠিকটাক,,,
বিয়ের কথা পাকাপাকি করবে ঠিক এমন সময় হুন হান করে
তিনজন মানুষ আমাদের বাসায় ঢুকে গেলো,,, দরজা খোলা ছিলো তো,,,,
আব্বু আম্মু আর আমার চোখ কপালে,,,, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম,,, বুঝতে বাকি রইলো না সব শেষ হতে দেরী নেই,,,, ওরা তিনজন,,,
দুজন এসিসটেন্ট দাড়িয়ে আছে আর বস সোফায় সাহেবের মতো বসে প্রথমে আমাকে দেখে নিলো তারপর ছেলে পক্ষের দিকে তাকিয়ে বললো,,, আরে আপনারা যে,,,, কাকে দেখতে এসেছেন?? আমার বউকে???
ছেলে পক্ষের সবাই আমার দিকে তাকালো,,,, আর আমি নিচের দিকে,,, জানি কোনো কাজ হবেনা,,, সে আবারো বললো,,,
আরে ভাই পাত্রী দেখতে আসার আগে খবর নিতে হয় তো জানো না,,,
কারো বউকে দেখতে আসা যে কত বড় অপরাধ জানো??
তার জন্যে কি শাস্তি দেওয়া যায়,,,
গালে হাত দিয়ে চোখ আমার দিকে,,.
আচ্ছা ওয়েট আমার বউকে জিঙ্গেস করি,,,,, বউ বলো এদের কি করা যায়???
আব্বু রেগে বললো,,,, ইমাদ তুমি কেনো এসেছো এখানে???? দেখো তামাশা বন্ধ করো,, নইলে কিন্তু,,,
আমি আব্বুকে থামিয়ে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম,,,, প্লিজ ইমাদ ওদের কিছু করবেন না,,, ওদের কোনো দোষ নেই,,,
ইমাদ চোখ লাল লাল করে,,, তাহলে কি দোষ আমার?? ওরা এখানে কেনো এসেছে,,,, রিফাত আশিক তোরা দেখছিস কি ধর ওদের,,,, ওদের সাহস কি করে হয় আমার বউকে দেখার,,,,
আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো,,, ইমাদ বললাম না ওদের কোনো দোষ নেই,,,, ওদের ছেড়ে দিন,...
ভুল হয়ে গেছে আমার,,, আমি ওদের আসতে বলেছি,,, সরি
বলেই রুমে চলে আসি,,,,, হাত থেকে সব চুড়ি গয়না খুলে নিচে ছুড়ে ফেলে মাটিতে বসে কাদতে লাগলাম,,,,,,
আর কত আমাকে এভাবে কাটাতে হবে,,,,,,, আমি যে আর পারছি না,,,
ইমাদ রেগে ওদের বললো,,,,
কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছেন কেনো আপনারা,,,, যান বের হোন,,,
আর কক্ষনো আসবেন না,,,,
ওরা চলে গেলে ইমাদ আব্বু আম্মুকে সালাম দিলো,,,,
এসব কি শুরু করছেন শশুর বাবা,,, আর কতবার বলতে হবে আপনাদের,,,, সিয়া শুধু আমার,,,,
আমি ছাড়া ও আর কারো হতে পারবে না,,,,
তারপরও কেনো আপনারা এসব করেন,,,………
ইমাদ আমার রুমের সামনে এসে দরজায় নক করছে,,,,
হলুদ পাখি দরজা খুলো,,, প্লিজ সোনা রাগ করেনা,,,
তোমাদের বার বার বলেছি আমার রাগটা একটু বেশি,,,
ধমক দিয়ে নাহয় কথা বলেছি তাই বলে এভাবে রাগ করে থাকবা,,,, দরজা খুলো জান পাখিটা,,,,
ইমাদ প্লিজ আপনি যান,,,
আমি দরজা খুলবো না,,,
দাড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই,,,,
তারপরও সে দরজা কিছুক্ষণ নক করার পর বুঝতে পারলো যে আমি দরজা খুলবো না তাই চলে গেলো,,,
আমার অনেক রাগ হচ্ছিলো নিজের উপর,,,,, রাগে হাত দুটো ড্রেসিংয়ের সাথে ঝপাৎ ঝপাৎ বারি মারছি আর কাদছি,,,,, আমার হাত কেউ ধরে ফেললো,,,
মানে যেখানে হাত বারি মারছিলাম সেখানে কারো হাত,,,, ইমাদ আপনি আবারো বেলকুণি দিয়ে এসেছেন আমিতো দরজাটা বন্ধ করতে ভুলে গেছিলাম,,,, কেনো এসেছেন এখানে,,,, চলে যান,,,,
ইমাদ আমাকে জোর করে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে,,,, এত রাগ করেনা হলুদ পাখিটা,,,, দেখোতো হাতের কি অবস্তা করেছো,,, আচ্ছা যাও সরি আর ধমক দিয়ে কথা বলবো না,,,,, এবার রাগটা ঝেড়ে ফেলো এসো একটু আদর করি বলে আমার মুখটা উপর দিকে করলে আমি নিচের দিকে করতে
চাইলেও পারছিনা,,,,
ইমাদ আমার কপালে চুমু দিলো তাও জোর করে,,,
তারপর হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো,,,,,
সব আমার কপাল,,,
কিন্তু কেনো যে এমন পোড়া কপাল নিয়ে এসেছিলাম জানিনা,,,,
সেই কলেজ থেকে.... যেদিন ফাস্ট কলেজে ভর্তি হলাম সেদিন থেকেই আমার দূর্ভাগ্যটা শুরু,,,,, এসব মনে পড়লে আমার জীবনটা অসহ্য মনে হয়,,,,, কত হাসি খুশি ছিলো আমার লাইফটা,,, হঠাৎ তার মধ্যে আগমন গঠলো ইমাদের,,,,, ইমাদ আমাদের এলাকার খুব সুনামধন্য মানুষের ছেলে,,,, তার উপর সে লিডার,,, পলিটিকসরের সাথে জড়িত,,, তাইতো সবাই তাকে ভয় পায়,,,,
সেদিন প্রথম কলেজে আসি,,,, খুব তাড়াহুড়ো করে আসছিলাম,,,,
ক্লাসের দিকে যেতেই কারো সাথে প্রচন্ড রকমের ধাক্কা লাগে,,,,
সামনের সেই মানুষটাই ছিলো ইমাদ,,,, ওর হাতে অনেক ব্যালেট ছিলো,,,,
তাও কোন দলের যেনো,,,, যেগুলো প্রতিটা ক্লাসের সবাইকে বাধ্যগত ভাবে নিতে হচ্ছিলো,,,
ভোট হবে নাকি তার জন্যে,,,,
ওর হাতের সব ব্যালেট পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো,,, আর দোষ তো আমারই সেটা আমি ভালো করেই জানি,,,,
ওকে সরি বলে ক্লাসে দেরী হয়ে যাচ্ছিলো তাই চলে গেলাম,,,,,,
কিন্তু সে আমার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে ছিলো,,,,,
কলেজে মারামারি চলছে,,,
সবাই যে যার জায়গায় সেফটি ভাবে রয়েছে কিন্তু আমার যে বাসায় যেতে হবে,,,,,
সবাই লুকিয়ে পড়েছে কিন্তু আমি এগিয়ে যাচ্ছি,,,,
খুব সাবধানে যাচ্ছিলাম তার পরও কারো একটা লাটির বারি আরেকটুর জন্যে হলে আমার মাথায় এসে পড়তো কিন্তু তার আগেই কেউ একজন আমায় বাচিয়ে নেয়,,,,,
বরাবর তার বুকের সাথে,,,,
একটু করে উপুড় হয়ে তার মুখটা দেখলাম,,,, ঐ যে সে ভাইয়াটা,,,
মানে ইমাদ যার নামটা আমার অজানা ছিলো,,,, মনে মনে তাকে প্রচন্ড ভালো লেগে যায়,,,,,,. কি ভালো মানুষ,,,,
কত উপকার করছে আমার,,,,
সে ইশারা করলে সাত আট জন এসে আমাদের গোল করে সেফটি দিয়ে দেয়,,,
আমরা সেই গোলাকার বৃত্তটার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে চলে আসি,,,
এত্ত প্রটেক্ট আমাকে জিবনেও কেউ করেনি,,,, তারপর সেই ভাইয়াটা নিজেই গাড়ি ঠিক করে দেয়,,,,
এমনি করে আরেকটা দিন হঠাৎ কোনো এক কারণে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়,,,, তাও দুই দলের বিবাদের কারণে,,, অতপর কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না,,, শেষে ইমাদ বাইকে করে আমাকে পৌছে দেয়,,,, হ্যা আমার মনে ধরেছিলো তাকে,,,, তবে শুধু ভালোলাগাটা,,,, তারপর আমি জানতে পারিনি যে এই ছেলেটাই ইমাদ,,, যার জন্যে পুরো কলেজের সবাই আমাকে ইদানিং ভাবী ভাবী করছে,.......
চলবে,,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন